এবিএন নিউজ |

আমাদের চারপাশটা লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই নানা ধরণের মানুষ। কেউ লড়ে, কেউ লড়ায়। কেউ জেতে বা জেতায়। কেউ মরে আবার হয়তো কেউ তার হাতের ইশারায় মারায়। প্রতিনিয়তই আমাদের চারপাশে বিচিত্র রকমের মানুষের আনাগোনা দেখি। কেউ লড়াই করে টিকে থাকার তাগিদে, কেউ আবার লড়াইয়ের ভয়ে পিছপা গিয়ে নন্দলাল হয়ে তার জীবনটাকে চার দেয়ালের মাঝেই কাটিয়ে দেয়। আবার কেউবা ভাবে তাদের জীবনটাকে এগিয়ে নেবে অন্যের চেয়ে আলাদা হয়ে।

আলাদা ভাবে এগিয়ে নেয়ার গল্প যখন আসলো তখন বলা যায় ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের কথা। যিনি কিনা তার ছাত্র জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি আবিস্কার করে ফেলেছিলেন ফেসবুক। কে বা জানতো সেদিনের একটা ছোট কাজ আজ বিশ্বের এক নাম্বার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। বিশ্বের কথা বাদ দিই। চলে আসি বাংলাদেশে । ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল এর ডাক্তার যার নাম ডাঃ মেহেদী হাসান খান। যিনি ভাবলেন বাংলা ভাষাকে করে দেবেন বন্ধু সুলভ ভাবে লিখার উপযুক্ত করে। যিনি তৈরী করলেন অভ্র কি বোর্ড। যা বর্তমানে কোটি কোটি মানুষের বাংলায় লিখার একমাত্র সঙ্গী।

এভাবে কিছু মানুষ দৈনন্দিন কাজ কর্মের ফাকে নিজেকে নিয়োজিত করেন সৃজনশীল কর্ম কান্ডে। চলুন আমরা আজকে একজন এমন মানুষ সম্পর্কে জানি।

বাংলাদেশের দক্ষিনের একটি জেলা বরগুনা। সে জেলায় বালিয়াতলী ইউনিয়নের রক্ষাচন্ডী গ্রামে বাস করে মোঃ সেকান্দর মাতুব্বর ও মোছাঃ সেতারা বেগম। ২ মেয়ে এবং ৭ ছেলে তাদের। ২০০১ সালে সেই পরিবারে সর্ব কনিষ্ঠ হিসেবে জন্ম নেয় আরেকটি ছেলে সন্তান। বাবা মা আদর করে তার নাম রাখেন মোঃ সাব্বির।

আমাদের আজকের গল্পের সেই সৃজনশীলতায় পা রাখা ছেলেটি আর কেউ না! মো. সাব্বির নামে জন্ম নেয়া এই যুবক।


দিন যায় সময় যায়। সাব্বির বড় হয়ে ওঠে সময়ের সাথে সাথে। ২০১০ সালে তিনি স্কুলে প্রাথমিক পর্যায় (পি এস সি) শেষ করেন। ২০১৪ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট এবং ২০১৮ সালে এস এস সি পাশ করেন।

ছোটবেলা থেকে বড় হতে হতে চারপাশে মোবাইল ফোনে র ছড়াছড়ি। তিনি দেখেন মানুষ মোবাইল ফোনে সারা বিশ্বের খবর হাতের নাগালেই পেয়ে যাচ্ছে। তা দেখে তিনিও ভাবেন শুধু খবর না পুরো বিশ্ব টাকেই হাতের নাগালে চাই। এস এস সি এর পরেই তিনি তাই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইন জগত সম্পর্কে জানতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে জানতে পারেন কম্পিউটারের মাধ্যমে তার নিজের পরিধিকে নিয়ে যেতে পারবেন অন্য রকম এক উচ্চতায়। কিন্তু এ ব্যাপারে জানার জন্য দরকার সে সম্পর্কে জ্ঞান। তাই এস এস সি পাশ করার পরে শুরু করেন কম্পিউটারের উপর ডিপ্লোমা। যাতে করে এ সম্পর্কে আরো জানতে পারেন, বের করতে পারেন নিজের ভেতর ছাই চাপা আগুন কে। জানতে শুরু করেন এ সম্পর্কে । ২০২৩ সালে তিনি বরগুনা পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন।

তিনি শুধু মাত্র পড়াশোনার মাঝেই নিজেকে আটকে রাখেন নি। সারা বিশ্ব যখন করোনার প্রকোপে স্তব্ধ তখন বরগুনার এই সন্তান নিজেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলছেন ওয়েব ডেভলভার হিসেবে। ২০২০ সালে শুরু হয় তার প্রথম পদক্ষেপ। শুরু হয় তার প্রথম টেক এজেন্সী S2K IT Tech Point এর যাত্রা । যারা বর্তমানে দেশের মাঝে অত্যন্ত নির্ভরশীল একটি টেক এজেন্সী। তারা গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং নানা রকম টেক সল্যুশনস দিয়ে থাকে।

এ সকল কাজ কর্মের মাঝে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সু প্রতিষ্ঠিত করে তোলেন। তারা দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও নানা ক্লায়েন্টের কাজ করে থাকেন। এ সকল কাজের মাঝে দেশের রেমিটেন্সে অনেক বড় অবদান রেখে যাচ্ছেন তিনি।
এত সব কাজের পাশাপাশি নিজেকে আরো ধারালো করে তোলেন অনলাইনের নানা প্ল্যাটফর্মে। প্রতিষ্টা করেন দুটি অনলাইন শপ । একটি S2K Shop (২০২১) অন্যটি Projapoti Shop (২০২৩) । এই অনলাইন শপ দুটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেশীও ও বিদেশী পন্য খুব সহজলভ্য এবং দ্রুত পৌছে দিয়ে যাচ্ছে। এ সকল কাজের মাঝে তিনি নিজেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাতার থেকে অন্য উচ্চতায়। বর্তমানে তিনি S2K Sabbir নামে মানুষজনের কাছে বেশী পরিচিত।

মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম এগিয়ে যাওয়া। সবাই এগিয়ে যায়। কেউ কাজ কর্মের সাথে কেউবা খালি হাতে। কেউবা স্রোতের সাথে গা মিশিয়ে। আমাদের আজকের গল্পের এই তরূন তুর্কি এই স্রোতের সাথে গা মেশান নি। তিনি নিজের চলার পথ নিজেই তৈরী করে নিয়েছেন। একজন পায়োনিয়ার যিনি পথ তৈরী করেন অন্যদের জন্য। নিজের তৈরী পথ রেখে যান অন্যদের জন্য যাতে বাকিরা তার মতো কন্টকাকীর্ণ পথে পদে পদে বাধা না পায়। মো. সাব্বির এমন একজন তরূন তুর্কি যিনি তার বয়স একটি নিছক সংখ্যায় পরিনত করেছেন। এই অল্প বয়সে একইসাথে একজন সফল ফ্রি ল্যান্সার, উদ্যোক্তা, অনলাইন শপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে তার সমবয়সী বাকিদের থেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন যোজন দূরত্বে।

এবিএন নিউজে ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত।